--> হুযুরে পাক (সাঃ)-এর সাথে বিবি খাদীজা (রাঃ)-এর শুভ বিবাহ। - islamic guide -->

হুযুরে পাক (সাঃ)-এর সাথে বিবি খাদীজা (রাঃ)-এর শুভ বিবাহ।

হুযুরে পাক (সাঃ)-এর সাথে ‌‌খা‌দীজা (রাঃ)-এর শুভ বিবাহ। হুযুরে পাক (সাঃ) এর বিবাহ

হুযুর পাক (সাঃ)  ‌‌ও বিবি খা‌দীজা (রাঃ)-এর শুভ বিবাহ। 


হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) পরম নিষ্ঠা ও সততার সহিত বিবি খাদীজা (রাঃ)-এর ব্যবসায় সংক্রান্ত কাজে আঞ্জাম দিয়া যাইতে লাগিলেন। তাঁহার প্রত্যেকটি কাজের ভিতর দিয়া সর্বরকম গুণ, উন্নত চরিত্র, সততা, নিষ্ঠা এবংশ্রেষ্ঠ যোগ্যতার পরিচয় পাওয়া যাইতে লাগিল। হযরত খাদীজা (রাঃ) তাহার এইসব গুণাবলী দেখিতে পাইয়া ক্রমেই তাঁহার প্রতি অধিক আকৃষ্ট হইয়া পড়িলেন। এমনকি, তিনি আর বিবাহ করিবেন না বলিয়া যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন তাহা ভুলিয়া গেলেন এবং বিবাহের মাধ্যমে নতুন করিয়া সংসার পাতিবেন বলিয়া দৃঢ়সংকল্প করিলেন। বিবি নাফিসা নাম্নী হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর জনৈকা বুদ্ধিমতি পরিচারিকা ছিল। হযরত খাদীজা (রাঃ) একদিন তাহার নিকট স্বীয় মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করিলেন। নাফিসা তাঁহাকে বলিল, আপনার আর কিছুই বলিতে হইবে না, আমিই সবকিছু ব্যবস্থা করিয়া দিতেছি । 


একদা নাফিসা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া প্রথমতঃ ব্যবসা সম্পর্কিত আলোপালোচনা করতে ছিলেন কথায় কথায় হুযুরে পাক (সাঃ)-কে এখনও তাঁহার বিবাহ না করার কারণ জিজ্ঞাসা করিল। হুযুরে পাক (সাঃ) তাঁহার আর্থিক অনটন জনিত কারণের কথা ব্যক্ত করিলেন। 


প্রতুত্তরে নাফিসা বলিল, মনে করুন, যদি কোন সুন্দরী, বুদ্ধিমতি, বিদূষী এবং বিরাট ধনশালিনী মহিলা আপনাকে বিবাহ করিতে রাজী হয় এবং বিবাহ বাবত আপনার যাবতীয় খরচ বহন করিতে থাকে, তবে আপনি এ প্রকার বিবাহ করিতে রাজী আছেন কি? 


হুযুরে পাক (সাঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, কে এমন মহিলা, যে আমার জন্য এতকিছু করিতে প্রস্তুত হইবে? 


নাফিসা বলিলেন, সেটা তাহারই ভাবিবার কথা, আপনার নহে। আপনি শুধু আপনার মতামতটির কথা বলুন। 


হুযুরে পাক (সাঃ) বলিলেন, এমন মহিলার পরিচয়টা শুনিতে পারি কি? নাফিসা বলিল, মনে করুন যদি সে মহিলা খুওয়াইলিদ কন্যা হযরত খাদীজা (রাঃ) স্বয়ং হন, তবে আপনি কি রাজী আছেন? 


হুযুরে পাক (সাঃ) বলিলেন, ইহাতো আমার জন্য পরম সৌভাগ্যর কথা। তবে এই ব্যাপারে আমার চূড়ান্ত মতামত নির্ভর করে আমার চাচা আবু তালিবের উপরে। যেহেতু তিনি আমার মুরুব্বি। অতএব, এবিষয় তাঁহার সঙ্গে একটু পরামর্শ এবং আলাপালোচনা করিয়া লইতে হয়। 


নাফিসা বলিল, হ্যাঁ তাহাতো করিতে হয়। তবে উহা আপনার নিজের ব্যাপার বলিয়া চাচার সহিত এবিষয়ে আলোচনা করিতে আপনার কিছুটা সঙ্কোচ হইতে পারে । আমি আপনাকে সেই দিক দিয়া অসুবিধায় না ফেলিয়া সেই ভারও আমি গ্রহণ করিলাম। আমিই আপনার চাচার সহিত এই ব্যাপারে কথা পাকাপাকি করিব। 


হুযুরে পাক (সাঃ) বলিলেন, তাহা হইলে তো ভালই হয়। 


অতঃপর নাফিসা হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর নিকট গিয়া নিজের সাফল্যের খবর জানাইয়া সমস্ত কথা আনুপূর্বিক তাঁহার নিকট বর্ণনা করিল । তিনি শুনিয়া অত্যন্ত খুশি হইলেন। অতঃপর নাফিসা হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর অনুমতিক্রমে আবু তালিবের নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, আপনার ভাতিজা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে বিবি খাদীজা (রাঃ)-এর বিবাহ হইতে পারে কি না? এ ব্যাপারে আপনার মতামত প্রকাশ করুন। আবু তালিব তাঁহার দরিদ্র ভাতিজার বিবাহের ব্যাপারে নিজেই উদ্গ্রীব এবং চেষ্টিত ছিলেন; কিন্তু খাদীজার মতো এতো বড় ধনবতী এবং বিদূষী মহিলা যে তাঁহার অভাবগ্রস্ত ভাতিজার সহিত বিবাহে রাজী হইবেন ইহা তিনি ভাবিতেও পারেন নাই। এইরূপ ঘটনা সাধিত হইলে তাহা যে ভাতিজা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্য খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার হইবে তিনি ইহা ভাল করিয়াই জানিতেন। তবু নাফিসার কাছে নিজের মনের কথা মোটামুটিভাবে প্রকাশ করিয়া এইরূপ জবাব দিলেন যে, ভাতিজা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সঙ্গে আলোচনা করিয়া তাঁহার মতামত না জানিয়া তো আমি চূড়ান্ত কথা বলিতে পারি না। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হইল, ইহা অত্যন্ত ভাল প্রস্তাব । 


নাফিসা বলিল, আশা করি তিনি এ ব্যাপারে রাজী হইবেন। তবে আপনি তাঁহার সহিত পরামর্শ ও আলাপালোচনা করিয়া এ প্রস্তাব উত্তম মনে করিলে আশা করি আপনিই পাত্রের পক্ষ হইতে প্রস্তাবটি পাত্রী পক্ষের মুরুব্বীর কাছে উত্থাপন করিবেন। যেহেতু পাত্র পক্ষের তরফ হইতেই প্রস্তাব উত্থাপন করার রীতি। 


নাফিসা বিদায় হইল, অতঃপর আবু তালিব অত্যন্ত খুশী মনে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে এ বিষয়ে কথাবার্তা বলিয়া স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলেন। তাহারপর আবু তালিব হযরত খাদীজার পক্ষীয় আমর ইবনে আসাদ এবং ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের কাছে উপস্থিত হইয়া প্রস্তাবটি পেশ করিলেন। তাঁহারা সানন্দে সম্মতি জানাইলেন। আবু তালিব নিজেই খাদীজার পক্ষীয় ঐ দুই ব্যক্তির সাথে বিবাহের যাবতীয় শর্তাদি এবং দিন তারিখ নির্দিষ্ট করিয়া ফেলিলেন।



islamic status bangla for facebook, istagram


 এই সময় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বয়স পঁচিশ বৎসর এবং খাদীজা (রাঃ)-এর বয়স ছিল চল্লিশ বৎসর। পাত্র ও পাত্রীর এই বয়সের পার্থক্যের বিষয় আবু তালিব চিন্তা করেন নাই তাহা নহে। তবে খাদীজার মত সর্বগুণ সম্পন্ন সুন্দরী ও ধনবতী রমণীর বিবাহের বেলায় ঐ সামান্য একটা ওজর মোটেই ধর্তব্যের মধ্যে নহে। মহাবিজ্ঞ আবু তালিব তাহা জানিতেন । 


বিবাহের তারিখ নির্ধারিত হইয়াছিল দশই রবিউল আউয়াল। নির্ধারিত তারিখে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পক্ষ হইতে আবু তালিব, হযরত আমীর হামজাহ, আব্বাস এবং আরও কতিপয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আত্মীয়-স্বজন এবং হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর পক্ষে তাঁহার চাচা আমর ইবনে আসাদ, ওয়ারাকা ইবনে নওফেল এবং আরও কতিপয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আত্মীয়-স্বজন হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর বাড়ীতে উপস্থিত হইয়া শুভ বিবাহ সম্পন্ন করিয়া দিলেন। 


বিবাহ অনুষ্ঠানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চাচা ও অভিভাবক আবু তালিব উঠিয়া দাঁড়াইয়া একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দান করিলেন। তিনি সমবেত ব্যক্তিগণকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন : 'সকল প্রশংসা সেই মহাপ্রভু আল্লাহর, যিনি আমাদিগকে মহামান্য নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর বংশে জন্মগ্রহণ করার সৌভাগ্য দান করিয়াছেন। আর কা'বাগৃহ রক্ষণাবেক্ষণ করার সৌভাগ্য দান ও সম্মান প্রদানে সম্মানিত করিয়াছেন। তৎপর আমি আপনাদিগকে বলিতে চাই যে, আমার ভাতিজা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অর্থের দিক দিয়া নিঃস্ব হইলেও সে সর্বগুণে গুণান্বিত যুবক। একথা আমি অত্যন্ত গর্বের সহিত উচ্চারণ করিতেছি! আমার দৃঢ়বিশ্বাস যে, আরবের প্রত্যেকটি লোকই আমার একথা সমর্থন করিবে। আর আমার বধূমাতা খাদীজা পরমা সুন্দরী, যথেষ্ট বিদূষী এবং অতুলনীয় ধন-সম্পদের অধিকারিণী হইয়াও যে আমার নিরক্ষর ও নিঃস্ব ভাতিজা মুহাম্মদ (সাঃ)-কে পতিত্বে বরণ করিতে সম্মত হইয়াছে তাহাতে তাঁহার সূক্ষ্ম জ্ঞান ও বিচণক্ষতারই পরিচয় পাওয়া যাইতেছে। সে এই দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়া আমাদের প্রশংসাই কুড়াইয়াছে। 


সবশেষে আমি সর্বান্তঃকরণে এই সদ্য শুভ পরিণীতা নব-দম্পতির দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনের স্থায়ী সুখ-শান্তি কামনা করিয়াই আমার ভাষণ সমাপ্ত করিতেছি। অতঃপর হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর পক্ষ হইতে পিতৃব্য-পুত্র ওয়ারাকা ইবনে নওফেল দাঁড়াইয়া উপস্থিত জনতাকে লক্ষ্য করিয়া একটি ভাষণ দান করিলেন । 


তিনি বলিলেন : 'অগণিত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদিগকে সমগ্র আরবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সন্তানের অধিকারী করিয়াছেন। বংশ গৌরবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং খাদীজা (রাঃ) কেহ কাহারও অপেক্ষা হেয় নহে। ইহাদের উভয়েরই পূর্ব-পুরুষ কয়েক ধাপ উপরে যাইয়া একই ব্যক্তি ছিলেন। আজ আবার দুইটি বংশের মধ্যে নূতন সম্পর্ক গড়িয়া উঠিল। আমারও স্থির বিশ্বাস যে, এ বিবাহে সম্মতি দান করিয়া আমরা কেহই ভুল করি নাই; বরং উভয় পক্ষই সাফল্য অর্জন করিয়াছি ও লাভবান হইয়াছি। আমাদের বংশ গৌরব অপেক্ষা হাশেমীদের বংশ মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে তাহা স্বীকার করিতে আমার এতটুকু দ্বিধা নাই। সে হিসাবে খাদীজা (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে স্বামীত্বে বরণ করিয়া যে আমাদের সম্মানই বৃদ্ধি করিয়াছে তাহা নহে বরং সে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়াছে। কেননা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মত জ্ঞানী, সচ্চরিত্র ও সত্যবাদী যুবক সমগ্র আরবে যে আর দ্বিতীয় কেহ নাই, তাহা আরবের প্রত্যেকটি লোকই স্বীকার করিবে। হে উপস্থিত কোরাইশ ভদ্র মহোদয়গণ ! আমি আপনাদের সকলের সম্মুখে মুহাম্মদ (সাঃ) ইবনে আবদুল্লাহর হাতে খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদকে শুভ পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ করিয়া দিলাম। আমি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানাইতেছি, আমাদের এই পাত্রপাত্রী নির্বাচন সার্থক হউক এবং এই নবদম্পতির জীবন সার্থক এবং শান্তি ও সুখে ধন্য হইয়া উঠুক ।

চলবে।....