--> নবীজি (সাঃ) ১১ জন প্রিয়তমা স্ত্রী । - islamic guide -->

নবীজি (সাঃ) ১১ জন প্রিয়তমা স্ত্রী ।

নবীজির ১১ জন স্ত্রীর নাম নবীজির দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম কি নবীজির স্ত্রীদের নাম কি কি হযরত আয়েশা রাঃ এর বিবাহ

 

নবী করীম (সাঃ) এর জীবনী

নবী করীম সাঃ এর বিবাহ-শাদী

নবীজি (সাঃ) ১১ জন প্রিয়তমা স্ত্রী ।



 হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মানব এবং সমগ্র নবী রাসূলের সেরা ব্যক্তি। বিশ্ব মানবতার মহান ও সেরা আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করিতে তাঁহার আবির্ভাব ঘটিয়াছিল এই জগতের বুকে। ইসলাম যে শ্রেষ্ঠ ধর্ম, মহান ধর্ম, আল্লাহতায়ালার নিকট একমাত্র পছন্দনীয় ও গ্রহণীয় ধর্ম সর্বোপরি মানবতার ধর্ম বা প্রকৃত ধর্ম তাহার বাস্তবতাকে প্রমাণ করিতে আসিয়াছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। সুতরাং একদিকে তিনি মহান স্রষ্টা আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক, আল্লাহর প্রতি বান্দার কর্তব্য তথা তাঁহার ইবাদাত উপাসনা প্রভৃতি পালন করিবার প্রয়োজনীয়তা, রীতি-নীতি ও ধারাসমূহ শিখাইবার মহান শিক্ষক যেমন ছিলেন তিনি, আবার ঠিক তেমনই বান্দার প্রাকৃতিক চাহিদা ও কর্তব্যগুলির ক্ষেত্রে যে পন্থা ও রীতি অবলম্বনীয় তাহার নিখুঁৎ ও শ্রেষ্ঠ আদর্শও লইয়া আসিয়াছিলেন তিনি। তিনি সংসার ধর্ম পালন করিয়াছিলেন। বিবাহ-শাদী করিয়া পারিবারিক জীবনযাপন নিজেও যেমন করিয়াছিলেন, অন্যকেও তেমনি উৎসাহিত করিয়াছিলেন। এক্ষেত্রে বৈরাগ্যকে তিনি দস্তুর মত অন্যায় ও অবান্তর বলিয়া অপছন্দ করিয়াছেন । এই নীতির ভিত্তিতেই আমরা তাঁহাকে দেখিতে পাইতেছি, তিনি একজন সম্পূর্ণ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনযাপনে রত আমাদেরই মত একজন মানব। 


জীবনে মহানবী (সাঃ) বিভিন্ন প্রয়োজন ও পরিস্থিতিতে বহু বিবাহ করিয়াছিলেন। তাঁহার বিবাহিত স্ত্রীগণের পরিচয় আমরা ধারাবাহিকবাবে নিম্নে উল্লেখ করিতেছি।


 নবীজির প্রথম প্রিয়তমা স্ত্রীর নামঃ


হুযুর পাক (সাঃ) এর বয়স যখন পঁচিশ, তখনও তাঁহার উপর অহী অবতীর্ণ হয় নাই। সে সময় তিনি চল্লিশ বৎসর বয়স্কা আরবের বিরাট ধনবতী, পরমা বিদূষী ও সর্বগুণে গুণবতী বিধর্মী রমণী হযরত খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ কে বিবাহ করেন। ইহাই তাঁহার প্রথম বিবাহ। খাদীজা (রাঃ)-এর গর্ভে হুযুরে পাক (সাঃ)-এর কয়েকজন সন্তান-সন্ততি ভূমিষ্ঠ হইয়াছিল। তাহাদের কথা যথাস্থানে উল্লেখ করিব। বিবি খাদীজা (রাঃ)-এর জীবিত থাকাকালে হুযুরে পাক (সাঃ) আর কোন বিবাহ করেন নাই। হুযুরেপাক (সাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের তিন বৎসর পূর্বে হযরত খাদীজা (রাঃ) বেহেশতবাসিনী হন। জান্নাতুল মুআল্লা নামক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। 


দ্বিতীয় প্রিয়তমা স্ত্রী :


তাঁহার মৃত্যুর পর হুযুরে পাক (সাঃ) হযরত সাওদা বিনতে জামআ (রাঃ) নাম্নী এক বৃদ্ধা বিধবা মহিলাকে বিবাহ করেন। তিনি কিছুদিনের মধ্যে রোগাক্রান্ত হইয়া অত্যধিক দুর্বল হইয়া পড়েন। ইহার পরে একসময় হুযুরে পাক (সাঃ) তাঁহার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাইবার মনস্থ করিলে হযরত সাওদা (রাঃ) তাঁহার নিজের স্ত্রীর স্ত্রীত্বের অধিকারী হুযুর (সাঃ) অন্যতমা সহধর্মিণী হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ)-কে অর্পণ করিয়া হুযুরে পাক (সাঃ)-কে বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! আমি যে নবী সহধর্মিনী হওয়ার গৌরব লাভ করিয়াছি, ইহাই আমার পক্ষে যথেষ্ট। সংসারে ইহার অতিরিক্ত আমার কোন কিছু পাওয়ার লালসা নাই। আমি শুধু এতটুকু আকাঙ্ক্ষা করি যে, হাশরের দিন যেন আমি নিজেকে আপনার স্ত্রী বলিয়া পরিচয় দিতে পারি। 


হযরত সাওদা (রাঃ)-এর কথা শুনিয়া হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) তাঁহাকে তালাক প্রদান করিতে বিরত রহিলেন। 


হযরত সাওদা (রাঃ) হিজরী চুয়ান্ন সালে পরলোক গমন 

করেন । 


তৃতীয় প্রিয়তমা স্ত্রী :


হযরত সাওদা (রাঃ)-কে বিবাহ করিবার কয়েকদিন পরেই হুযুরে পাক (সাঃ) তাঁহার সর্বপ্রধান সহচর প্রথম খলীফা হযরত আবুবকর (রাঃ) দুহিতা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন। বিবাহকালে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বয়স ছিল মাত্র ছয় বৎসর। হিজরতের তিন বৎসর পূর্বে শাওয়াল মাসে এই শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। হিজরতের পরে হযরত আয়েশার নয় বৎসর বয়সে তিনি হুযুরে পাক (সাঃ)-এর গৃহে গমন করেন। হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর ইন্তেকালের সময় হযরত আয়েশা (রাঃ) মাত্র আঠার বৎসর বয়সে পৌছিয়াছিলেন। 


তিনি হুযুরে পাক (সাঃ)-এর অবর্তমানে হিজরী আটান্ন সনের রমজান মাসের সতেরই তারিখে মদীনা শরীফে ইনতেকাল করেন। তাঁহাকে জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্থানে দাফন করা হয়। 


চতুর্থ প্রিয়তমা  স্ত্রীঃ


হুযুরে পাক (সাঃ)-এর চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন। তাঁহার অন্যতম প্রধান সহচর দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রাঃ) দুহিতা হযরত হাফসা (রাঃ)। হুযুরে পাক (সাঃ) তাঁহাকে একবার রাজায়ী (প্রত্যাহারযোগ্য) তালাক প্রদান করিয়াছিলেন। পুনরায় আল্লাহর নির্দেশে তিনি তাহা প্রত্যাহার করতঃ আবার তাঁহাকে গ্রহণ করেন। হযরত হাফসা (রাঃ) বৎসরের অধিকাংশই সময়ই রোযা রাখিতেন। তিনি বেশী বেশী নামায পড়িতেন। পয়তাল্লিশ হিজরী সনের সাবান মাসে তিনি পরলোক গমন করেন। জান্নাতুল বাকীতে তিনি সমাহিত 

হন। 


পঞ্চম প্রিয়তমা স্ত্রীঃ


হুযুরে পাক (সাঃ)-এর পঞ্চম স্থানীয়া স্ত্রী ছিলেন হযরত জয়নব বিনতে খুযায়মা (রাঃ)। বিবাহের মাত্র তিনমাস পরেই তিনি ইন্তেকাল করেন । 


ষষ্ঠ প্রিয়তমা স্ত্রী :


হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) পঞ্চম স্থানীয়া বিবির পরে হযরত উম্মে সালামা বিনতে সোহায়েল (রাঃ)-কে বিবাহ করেন। ইনি হুযুরে পাক (সাঃ)-এর ফুফু আতিকা বিনতে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা ছিলেন। হিজরী উনষাট সনে তিনি পরলোক গমন করেন। 


সপ্তম প্রিয়তমা স্ত্রীঃ


হযরত রাসূলে পাক (সাঃ)-এর সপ্তম স্থানীয় বিবির নাম ছিল জয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ)। ইনিও হুযুরে পাক (সাঃ)-এর ফুফাতো ভগ্নি অর্থাৎ আবদুল মুত্তালিব-দুহিতা মায়মুনার কন্যা ছিলেন। হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর পালিত পুত্র যায়েদ (রাঃ)-এর সহিত প্রথম বিবাহ হইয়াছিল। যায়েদ জয়নাবকে তালাক দিবার পর হুযুরে পাক (সাঃ) তাঁহাকে বিবাহ করেন। এ বিবাহ অনুষ্ঠিত হইয়াছিল কুদরাতি পন্থায়। তিনি হিজরী বিশ সনে ইন্তেকাল করিয়াছিলেন । 


অষ্টম প্রিয়তমা স্ত্রীঃ


হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) তাঁহার সপ্তম স্থানীয়া বিবির পরে উম্মে হাবীবাহ বিনতে আবু সুফিয়ান (রাঃ)-কে বিবাহ করিয়াছিলেন। বিবাহ হইয়াছিল আবিসিনিয়ায়। মক্কা হইতে তাঁহার পূর্ব-স্বামীর সাথে তিনি সেখানে হিজরত করিয়াছিলেন। তাঁহার স্বামীর মৃত্যুর পরেই হুযুরে পাক (সাঃ) তাঁহাকে বিবাহ করার প্রস্তাব তৎকালীন আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশীর মারফত উম্মে হাবীবাকে অবহিত করান। উহার মোহরানাস্বরূপ চারিশত দিনার হুযুরে পাক (সাঃ)-এর পক্ষ হইতে আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী আদায় করিয়া দিয়াছিলেন। তিনি হিজরী চুয়াল্লিশ সনে ইন্তেকাল করিয়াছিলেন। 


নবম প্রিয়তমা স্ত্রীঃ


হুযুরে পাক (সাঃ)-এর নবম স্থানীয়া স্ত্রী ছিলেন জুয়াইরিয়া বিনতে হারেস। তিনি হিজরী ছাপ্পান্ন সনে ইন্তেকাল করিয়াছিলেন। 


দশম প্রিয়তমা স্ত্রী :


হুযুরে পাক (সাঃ)-এর সঙ্গে দশম স্থানীয়া যে মহিলার বিবাহ হইয়াছিল, তাঁহার নাম ছিল হাই বিন আখতাবের কন্যা হযরত সুফিয়া (রাঃ)। তিনি হযরত মূসা (রাঃ)-এর ভ্রাতা হযরত হারুন (আঃ)-এর বংশোদ্ভূতা কন্যা ছিলেন। খায়বারের যুদ্ধের সময় তিনি বন্দী হইয়া হযরত (সাঃ)-এর সম্মুখে আনিত হইলে নবী (সাঃ) তাঁহাকে দাসী হিসাবে গ্রহণ করার বদলে নির্ধারিত পরিমাণ টাকার বিনিময়ে তাঁহাকে মুক্ত করিয়া দেন। তাহারপর ঐ অর্থের মোহর ধার্য করিয়া তাঁহাকে বিবাহ করেন। তিনি হিজরী বায়ান্ন সনে বেহেশতবাসিনী হন। 


একাদশ প্রিয়তমা স্ত্রীঃ


মায়মুনা বিনতে হারেস আমেরিয়া (রাঃ) ছিলেন হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর একাদশ স্থানীয়া স্ত্রী। হুযুরে পাক (সাঃ) মক্কার সীমান্তে অবস্থিত যরফ নামক একটি গ্রামে এই বিবাহটি করেন। হিজরী একান্ন সনে ঐ স্ত্রী পরলোক গমন করিয়াছিলেন।


 উল্লিখিত বিবাহিতা স্ত্রীগণ ছাড়াও হুযুরে পাক (সাঃ)-এর চারিজন বাঁদী ছিলেন। উহাদের একজন ছিলেন মারিয়া কিবতিয়া বিনতে শামুন। তাঁহাকে আলেকজান্দ্রিয়ার শাসনকর্তা উপহারস্বরূপ হুযুরে পাক (সাঃ)-এর খেদমতে পাঠাইয়াছিলেন। 


তিনি হিজরী ষোল সনে ইন্তেকাল করেন। 

হুযুরে পাক (সাঃ)-এর দ্বিতীয় বাঁদীর নাম ছিল রেহানা বিনতে যায়েদ। তিনি পূর্বে বনি নজীর বা বনি কোরায়জা সম্প্রদায়ের একব্যক্তির বাঁদী ছিলেন। হিজরী দশম সনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 


হুযুরে পাক (সাঃ)-এর তৃতীয় বাঁদীর নাম ছিল উম্মে আয়মন। সালমা নাম্নী অন্য এক মহিলা ছিলেন হুযুরে পাক (সাঃ)-এর চতুর্থ বাঁদী! হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর বিবিগণের মধ্যে একমাত্র হযরত আয়েশা (রাঃ)-ই ছিলেন কুমারী। আর অন্যান্যগণ সকলেই পূর্ব বিবাহিতা ছিলেন। ইহাদের মধ্যে একমাত্র প্রথম স্ত্রী হযরত খাদীজা (রাঃ)-ই হুযুরে পাক (সাঃ)-এর জীবিত থাকাকালে ইন্তেকাল করেন, আর অন্যান্য সকলে হুযুরে পাক (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর মৃত্যুবরণ 

করেন ।


 হুযুরে পাক (সাঃ)-এর দুইজন স্ত্রী ব্যতীত বাকী সকলেরই মোহরানা ধার্য হইয়াছিল পাঁচশত দিরহাম করিয়া। বাকী দুইজন অর্থাৎ উম্মে হাবীবাহ (রাঃ) ও হযরত সুফিয়া (রাঃ)-এর মোহরানা চারিশত দিরহাম করিয়া ধার্য করা হইয়াছিল ।  


চলবে।....


১.নবীজির পোশাক মোবারক

২.হুজুর পাক (সাঃ) এর নামাজ

৩.হুজুর পাক (সাঃ) এর জীবনী

৪.হুজুর পাক (সাঃ) এর ছীনাচাক

৫.নামাজের ওয়াক্ত সমূহের বর্ণনা