--> নবুয়ত প্রাপ্তি - islamic guide -->

নবুয়ত প্রাপ্তি

নবুয়ত কাকে বলে ? নবুয়ত প্রাপ্তি নবুয়ত শব্দের অর্থ কি হেরা গুহা ইতিহাসের অংশ কেন? নবুয়ত বলতে কি বুঝ ? রাসুল সাঃ হেরা গুহায় কতদিন ছিলেন?

নবুয়ত প্রাপ্তি


 নবুয়ত প্রাপ্তি


নবুয়ত শব্দের বাংলা অর্থ নবি,(বিশেষ্য) পয়গম্বর; রসুল; প্রেরিত পুরুষ; আল্লাহর বাণীবাহক। 


বুয়ত প্রাপ্তির সময় অত্যাসন্ন হইয়া উঠিলে হুযুরে পাক (সাঃ) যেন পূর্বাপেক্ষা আরও বেশী নির্জনতাপ্রিয় হইয়া উঠিলেন। এসময় তাহার বয়স চল্লিশ বৎসর পূর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল। হুযুরে পাক (সাঃ) এ সময়ে হেরা পর্বতের নির্জন গুহায় একাধারে কয়েকদিন নির্জনে বাস করিতে লাগিলেন। ইতোমধ্যে একদিন হঠাৎ ফেরেশতা জিব্রাঈল আসিয়া রাসূল (সাঃ)-কে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, 'ইকরা' অর্থাৎ পাঠ করুন হার উত্তরে হুযুর (সাঃ) বলিলেন,'মা আনা বি কারিয়িন' আমি তো পড়িতে জানি না। তখন জিব্রাঈল হুযুরে পাক (সাঃ)-কে সজোরে আলিঙ্গন করিয়া ছাড়িয়া দিয়া বলিলেন পড়ুন; কিন্তু হুযুর (সাঃ) ঐ একই জবাব দিলেন। এইভাবে জিব্রাঈল হুযুর (সাঃ)-কে তিনবার পড়িতে বলিলেন এবং তিনবার আলিঙ্গন করিলেন। শেষবার জিব্রাঈল তাঁহাকে আলিঙ্গন করিয়া ছাড়িয়া দিয়া 'সূরা ইকরা' এর প্রথম পাঁচ আয়াত অর্থাৎ 'মা'লাম ইয়া'লাম' পর্যন্ত পাঠ করাইলেন।

بسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

 اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَق(1) خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ

عَلَق(2) اِقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُنَ(3) الَّذِي عَلَمَ  بِالْقَلَمِ(4)

(5)عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْن  


 আয়াতগুলির অর্থ এইঃ

"পরম করুনাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি' 

(১) হে নবী! আপনি স্বীয় প্রভুর নাম লইয়া পৰিত্ৰ কোরআন পাঠ করুন, যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন। (২) যিনি মানুষকে জমাট রক্ত দ্বারা সৃষ্টি করিয়াছেন । (৩) আপনি কোরআন পাঠ করুন আর আপনার প্রভু অত্যন্ত দানশীল। (৪) যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়াছেন। (৫) মানুষকে ঐ সমস্ত শিক্ষা দিয়াছেন যাহা সে জানিত না ।


 হুযুরে পাক (সাঃ) ভয়ে কম্পিত কলেবরে ফেরেশতা জিব্রাঈলের সাথে সাথে উক্ত কালামগুলি পাঠ করিলেন। ফেরেশতা জিব্রাঈল তাঁহাকে এই শিক্ষা দিয়াই সেদিনকার মত অদৃশ্য হইয়া গেলেন। হুযুরে পাক (সাঃ) কাঁপিতে কাঁপিতে অজ্ঞান হইয়া মাটিতে পড়িয়া গেলেন। এদিকে হযরত খাদীজা (রাঃ) স্বামীর বাড়ীতে ফিরিতে বিলম্ব দেখিয়া সংবাদ লওয়ার জন্য দুইজন লোককে হেরা পর্বতগুহায় পাঠাইয়া দিলেন। তাহারা তথায় পৌঁছিয়া গুহার অনতি দূরে হুযুরে পাক (সাঃ)-কে অজ্ঞান অবস্থায় পড়িয়া থাকিতে দেখিয়া তদবস্থায়ই তাঁহাকে ধরাধরি করিয়া বাড়ীতে লইয়া গেল এবং তাঁহার সেবা-শুশ্রূষা করিতে লাগিল। কিছুক্ষণ পর তাঁহার জ্ঞান একটু ফিরিয়া আসিল; কিন্তু তাঁহার হৃদয় হইতে ভয় তখনও পুরাপুরি দূর হয় নাই। তিনি কম্পিত স্বরে বলিলেন, খাদীজা! আমার উপরে পানির ছিটা দাও এবং আমার শরীর কম্বল দ্বারা ঢাকিয়া দাও। আমার জীবনের আশংকা হইতেছে। 


হযরত খাদীজা (রাঃ) তাঁহাকে অভয় দিয়া বলিলেন, আপনি এত ভয় পাইতেছেন কেন? আপনার ভয় পাইবার কোন কারণই নাই। যেহেতু আপনি তো কখনও কাহারও অপকার করেন নাই। আপনি সকলের সাথে সদ্ব্যবহার করেন। দ্বীন-দুঃখীকে সাহায্য করেন। ইয়াতীমদিগকে স্নেহ করেন। তথাপি আপনার প্রতি আল্লাহতায়ালা কেন বিমুখ হইবেন? আপনার কি হইয়াছে খুলিয়া বলুন, শুনি । 


হুযুর (সাঃ) তাঁহাকে সবকথাই খুলিয়া বলিলেন। হযরত খাদীজা (রাঃ) বলিলেন, আপনার ভয়ের কোন কারণ নাই। তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে এইরূপ অনেক ঘটনার কথা উল্লিখিত আছে। আপনি অনুমতি করিলে আমি চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের নিকট যাইয়া এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিয়া আসিতে পারি। তিনি তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে বিশেষ পারদর্শী। আমার বিশ্বাস যে, এ সম্বন্ধে সবকথা বলিতে পারিবেন। 


হুযুরে পাক (সাঃ) সম্মত হইলেন, অতঃপর খাদীজা (রাঃ) স্বামীকে লইয়া ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের নিকট গিয়া সবকথা তাঁহার নিকট বলিলেন।


ওয়ারাকা ইবনে নওফেল বলিলেন : আপনার কথা শুনিয়া আমার দৃঢ়প্রত্যয় জন্মিয়াছে যে, ইহা আর কিছুই নয়, হযরত মূসা (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) প্রভৃতি নবীদের নিকট আল্লাহর যে দূত আল্লাহর বাণী লইয়া আগমন করিতেন, তিনিই আপনার নিকট আসিয়াছিলেন। তাঁহার নাম হযরত জিব্রাইল। কোন নবী ব্যতীত অন্য লোকের নিকট তিনি আগমন করেন না। আপনি নিশ্চয় শেষ নবী।

 

            📌নবীজির পোশাক মোবারক।📌


 তিনি আরও বলিলেন, আপনার খুবই সাবধানতা অবলম্বন করিতে হইবে। কেননা খুব সত্বরই এমন সময় আসিবে, যেদিন দেশের লোক আপনার কথা বিশ্বাস করিবে না, এমনকি আপনার আত্মীয়-স্বজন পর্যন্ত আপনার শত্রুতে পরিণত হইবে এবং আপনার প্রতি অসহনীয় অত্যাচার করিবে। এমন কি আপনাকে দেশ হইতে তাড়াইয়া দিবে। 


একথা শুনিয়া হুযুরে পাক (সাঃ) অত্যন্ত শংকিত ও দুঃখিত হইয়া বলিলেন, তবে কি আমার দেশবাসী আমাকে দেশ হইতে তাড়াইয়া দিবে? তিনি বলিলেন : হাঁ, দুনিয়াতে যত নবী ও রাসূল আসিয়াছিলেন, তাহাদের সকলের প্রতিই স্বীয় দেশবাসীগণ নির্মম অত্যাচার করিয়াছে। আপনার বেলায়ও ইহার কিছুমাত্র ব্যতিক্রম হইবে না। তবে আল্লাহর কসম! আমি যদি সেই সময় পর্যন্ত জীবিত থাকি, তবে আমি আপনাকে যথাসাধ্য সাহায্য করিব । 


ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের কথায় হুযুরে পাক (সাঃ) এবং হযরত খাদীজা (রাঃ) উভয়েই কিছুটা ভীত ও চিন্তিত হইলেন। তাহা সত্ত্বেও তাহাদের মনে যেন একটা সাফল্যের আনন্দ ফুটিয়া উঠিল এবং সেই আনন্দ লইয়াই তাঁহারা ঘরে ফিরিলেন। 


ইতোমধ্যে একদিন হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) একটা বিরাট জনহীন প্রান্তরের উপর দিয়া একাকী পথ চলিতেছিলেন। এমন সময়ে আকাশের দিক হইতে একটা গুরু গম্ভীর শব্দ ভাসিয়া আসিল : ইয়া মুহাম্মদ ! তিনি উক্ত আহবান বাণী শুনিয়া উপরের দিকে তাকাইয়া দেখিতে পাইলেন-বিরাট একটা সিংহাসন শূন্যপথে ভাসিয়া আসিতেছে এবং উহাতে ফেরেশতা জিব্রাঈল একটা বিরাট আকৃতিতে বসিয়া রহিয়াছেন।


 ইতোপূর্বে তিনি আর কোনদিনই ফেরেশতা জিব্রাঈল এরূপ আকৃতির দেখেন নাই। সেজন্য তিনি ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে বাড়ী আসিয়া হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে বলিলেন, হে খাদীজা ! শীঘ্র আমার শরীর কাপড়ের দ্বারা ঢাকিয়া দাও। 


হযরত খাদীজা (রাঃ) তাড়াতাড়ি একখানা চাদর আনিয়া তাঁহার শরীর ঢাকিয়া দিলেন। ঠিক সেই সময়ে তাঁহার উপর অহী অবতীর্ণ হইল।


 তিনি শুনিতে পাইলেন : 


হুয়া আইয়্যুহাল মুদ্দাচ্ছির কুম ফাওয়ানজির ওয়া রাববুকা ফাকাব্বির ওয়া ছিইয়াবুকা ফাতাহির অররুজযা ফাহজুর।' 

অর্থাৎ হে চাদরাবৃত ব্যক্তি! উঠ, এবং লোকদিগকে ভয় প্রদর্শন কর এবং তোমার প্রতিপালকের গুণগান এবং তোমার পরিধানের বস্ত্র পবিত্র রাখ এবং শিরক ও কুফরী হইতে দূরে থাক । 


এর পর যথারীতি হুযুরে পাক (সাঃ)-এর উপরে অহী নাযিল হইতে লাগিল । পবিত্র কোরআনের যে যে আয়াত যখন নাযিল হইত, তিনি তখনই তাহা মুখস্থ করিয়া রাখিতেন এবং তাহা হইতে হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে পাঠ করিয়া শুনাইতেন । হযরত খাদীজা (রাঃ) সঙ্গে সঙ্গে তাহা মুখস্থ করিয়া ফেলিতেন । 


হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর প্রতি ইসলাম প্রচারের আদেশ ও তাহার প্রাথমিক নিয়ম নাযিল হওয়ার পর একদা তিনি হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে বলিলেন, হে খাদীজা! তুমি এখন আমার সম্বন্ধে কি ধারণা পোষণ কর? তিনি বললেন : আমি আপনাকে আল্লাহর নবী বলে বিশ্বাস করছি। হুযুরে পাক (সাঃ) বলিলেন, তাহা হইলে তুমি এখনই শিরক ও কুফরী হইতে তাওবা করিয়া নিরাকার, সর্বশক্তিমান এক আল্লাহর উপরে বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁহার ইবাদাত-বন্দেগীতে মনোনিবেশ কর। তুমি পাঠ কর, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।' তখনই হযরত খাদীজা (রাঃ) কালেমা তাইয়্যেব পাঠ করিয়া ইসলাম গ্রহণ করিলেন এবং শিরক ও কুফরী হতে তাওবা করলেন।

                                                চলবে।....

                                          

১.রাসূল (সাঃ) এর ১১ জন প্রিয়তমা স্ত্রী 

২.রাসূল (সাঃ) এর সন্তানদের নাম 

৩.রাসূল (সাঃ) এর সাথে মা খা‌দীজা (রাঃ) এর শুভ বিবাহ



© islamic guide. COPYRIGHT © 20221-23 islamicguide - ALL RIGHTS RESERVED ALL THE CONTENT IMAGE AND TRADEMARK BELONGS TO THEIR RESPECTIVE OWNERS.