--> কারবালার ইতিহাস শাহাদাতের পূর্বের ঘটনা - islamic guide -->

কারবালার ইতিহাস শাহাদাতের পূর্বের ঘটনা

শাহাদাতের পূর্বের ঘটনা

  


কারবালার ইতিহাস...

শাহাদাতের পূর্বের ঘটনা:


মহরমের ৯ তারিখ যুদ্ধের দামামা বাজার অপেক্ষায় সবাই প্রহর গুনছে হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় বসেই ছিলেন এই জীমুনির মাঝে তিনি হঠাৎ উচ্চ স্বরে আওয়াজ করে উঠলেন তার পাশে বসা ছিল তাঁর বোন জয়নাব আওয়াজ শুনে তিনি দৌড়ে এসে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানালেন।

এইমাত্র আমি নানাজান কে স্বপ্নে দেখেছি! (নবীজী সাঃ)তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন হে হুসাইন তুমি কিছুক্ষণের মাঝে আমার সাথে এসে শামিল হতে যাচ্ছ।

এ কথা শুনে জয়নাব কান্নায় ভেঙে পড়লেন হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে সান্তনা দিচ্ছিলেন এমনই সময় সীমার তার সুসজ্জিত বাহিনী নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হল হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর ভাই আব্বাস অগ্রসর হয়ে তাদের অভিপ্রায় জানতে চাইলে সীমার ঘোষণা করলো তোমাদের কে আর সময় দেওয়া হবে না এখন থেকে তোমাদের সাথে আমাদের যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে।

হযরত আব্বাস এর সাথে হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে এই সংবাদ জানালে তিনি বললেন। তাদেরকে বল আজ আমরা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নই অনন্ত একদিনের জন্য হলেও যেন তারা যুদ্ধ পিছিয়ে দেয়। কারণ? ওসিয়ত করতে এ নিজেদের গোনার জন্য 

আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে আমাদের অনন্ত একটি রাত প্রয়োজন এ রাতে আমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চেয়ে পাপ মুক্ত হতে চাই।

সীমার এবং ওমর ইবনে সাদ সাথীদের সাথে পরামর্শ করে সেদিনকার মত যুদ্ধ মুলতবি ঘোষণা করলে সৈনিকরা নিজ নিজ শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করল এই সময় হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আহলে বায়েত সহ সকল সাথীদের একত্রিত করে এক ভাষণ দিলেন সকলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন।

হে আল্লাহ তুমি নবীর বংশের জন্ম দিয়ে আমাকে এ মর্যাদার আসনে বসিয়েছো। তার শোকর আদায় করার ভাষা বা ক্ষমতা আমার নেই তুমি আমাকে সুখে রাখো এবং দুখে রাখো সর্বাবস্থায় আমি আমার সাধ্যমত আমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি আমাদের উপর তোমার অসংখ্য করুনা  তুমি আমাদের চোখ কান ও অন্তর দিয়েছো বলেই আমরা তোমার পবিত্র কালাম হদয়রঙ্গম করতে পারি। হে প্রভু তুমি তোমার মনোনীত বান্দাদের কাতারে আমাদের সামিল করে নাও তারপর তিনি আরো বললেন।

এ মুহূর্তেই পৃথিবীর বুকে আমার সাথীদের চেয়ে অধিক আত্মত্যাগী কেউ আছে বলে আমার জানা নেই। আমি জানিনা বর্তমান সময়ে আমার পরিবার পরিজনের মত এমন দুর্ব্যবস্থায় পৃথিবীর অন্য কোথাও কোন পরিবার সময় কাটাচ্ছে কিনা ।

হে আল্লাহ আজ যারা নিজেদের প্রাণ প্রাণের মায়া ও মুহূর্তে করে তোমার আওয়াজ পৃথিবীর বুকে বুলন্দ রাখার লক্ষণ আমার পক্ষ হয়ে অস্ত্র চালাতে প্রস্তুত তাদের তুমি হিম্মত দাও সাহস ও শক্তি দাও। উত্তম প্রতিদানে তাদের করো তুমি পুরস্কৃত।

বন্ধুগণ আমার মন বলছে আগামীকালই তাদের সাথে আমাদের চূড়ান্ত ও শেষ ফসালা হয়ে যাবে তাই আমি স্বেচ্ছায় ও খুশি মনে তোমাদের বলছি পূর্ব আকাশে আগামী ভোরের সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে তোমরা এই স্থান ত্যাগ কর নিজেদের ইচ্ছামত নিরাপদ আশ্রয় চলে যাও দিনে আলোতে সেই সুযোগ আর তোমরা হয়তো পাবে না আর যদি সম্ভব হয় তাহলে তোমাদের সাথে আমার পরিবারের একজন করে সদস্যকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাও কারণ দুশমনরা শুধু আমাকে চায় আমাকে পেলে তারা তোমাদের দিকে ফিরে তাকাবে না।

হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এই পরামর্শী ভাষণ শোনার পর সকলে এক বাক্যে বলে উঠলো খোদার শপথ নিজের জীবনের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে শত্রুর হাতে আপনাকে তুলে দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর মত হীন নিকৃষ্ট ও জঘন্য মানসিকতার আমাদের নেই এমন লাঞ্ছনা কর জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু আমাদের কাছে অনেক শ্রেয় এমনই ভাবে জীবন ধারণের সামান্যতম স্পৃহা আমাদের নেই।

এরপর হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মুসলিম ইবনে আকিলের আত্মীয়-স্বজনের উদ্দেশ্য বললেন যথেষ্ট তোমরা সকলেই ফিরে যেতে পারো আমি খুশি মনে তোমাদের চলে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি।

উত্তরা তারা বলল যখন মানুষ আমাদের জিজ্ঞাসা করবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কলিজার টুকরা সহ তার পরিবারকে মৃত্যুর মুখে ঢেলে দিয়ে তোমরা কি করে চলে আসলে তখন আমরা তাদের কি বলবো মুখ লুকানোর জায়গাও তো তখন আমরা খুঁজে পাবো না আপনার সাথে আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেছে আমরা জেনে শুনেই এই বিপদ সংকুল পথে আপনার সঙ্গী হয়েছি আমাদের শরীরে এক ফোটা রক্ত অবশিষ্ট থাকতে আমরা আপনাকে এখানে রেখে যাওয়ার কল্পনা করতে পারি না আমাদের দেহে প্রাণ থাকতে আমরা সামান্য ক্ষতিও সহ্য করব না আপনার শরীরে শত্রুর সামান্য আচরেরও আমরা বদলা নিব বদলা আমাদের নিতেই হবে। 

একে ওকে সবাই এই মত প্রকাশ করে মনের দৃঢ়তা প্রকাশ করল সময় হযরত জয়নাব ব্যাথা তোর মন ও ব্যাকুল হৃদয় কান্না শুরু করে তাকে উদ্দেশ্য করে হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এই ওছিয়ত করেন আল্লাহর দোহাই দিয়ে আমি তোমাকে ওষধ করে যাচ্ছি আমার শাহাদাতের পর সুখে মহামান হয়ে কাপড় ছেড়া মাতম করা উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করার মত যাবতীয় শরীয়ত গর্হিত কাজ কঠোরভাবে বর্জন করবে।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সাথে বলতে হয় যারা আজ হযরত হোসেন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর আশেক বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে বেড়ায় তার প্রতি গভীর প্রেম-ভালোবাসা যারা দাবি করে তারাই আজ এ সকল জঘন্য কাজগুলোকে দিনের অঙ্গ মনে করে খুব ঘটা করে পালন করে যাচ্ছেন তারা হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর সর্বশেষ ওসিয়তের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে যাচ্ছে আফসোস হয় তাদের উপর তাদের বুদ্ধির উপর লজ্জায় মাথা নিয়ে আসে তাদের কার্যকলাপ দেখে।

এই ওছিয়তের পর হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সাথী সঙ্গীদের নিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া ও ইস্তেগফারের মনোযোগী হলেন আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটির ভিতর দিয়ে তারা 

মুহাররমের ৯ তারিখ দিবাগত রাত পুরোটাই কাটিয়ে দিলেন। 


                        চলবে.....